সৃষ্টির সেবা (خِدْمَةُ الْخَلْقِ ) (পাঠ ৪)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা আখলাক | - | NCTB BOOK
80
80

ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া ও সহানুভূতিশীল হয়ে আদর-যত্ন করার নামই হলো সৃষ্টির সেবা। মহান আল্লাহ এই সুন্দর পৃথিবীতে মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা করে পাঠিয়েছেন। আর সৃষ্টিকুলের সবকিছু যেমন- জীবজন্তু, পশু-পাখি, কীটপতঙ্গ, পাহাড়-পর্বত, গাছপালা ইত্যাদি মানুষের উপকারের জন্য সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং এসব সৃষ্টির প্রতি সহানুভূতি দেখানো এবং এগুলোর যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা অবশ্য কর্তব্য।

গুরুত্ব

যে সৃষ্টির প্রতি দয়া ও সহানুভূতি প্রদর্শন করে, আল্লাহ তার প্রতি খুশি হয়ে রহমত বর্ষণ করেন। এ সম্পর্কে মহানবি (স.) বলেন,

ارْحَمُوا مَنْ فِي الْأَرْضِ يَرْحَمُكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ

অর্থ: 'তোমরা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবে। তাহলে আসমানের অধিপতি মহান আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।' (তিরমিযি)

পৃথিবী ও এই মহাবিশ্বে যা কিছু আছে তা সবই আল্লাহর সৃষ্টি। সৃষ্টিজগতের সবকিছু নিয়ে আল্লাহর সৃষ্টি পরিবার। আল্লাহর সৃষ্টি পরিবারে মানুষই সেরা সৃষ্টি। পরিবারে যেমন পরিবার প্রধানের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে তেমনি সৃষ্টিজগতের প্রতিও মানুষের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। সৃষ্টিকুলের প্রতি এ দায়িত্ব পালন করার নাম সৃষ্টির সেবা।

মানুষের উপর প্রধানত দুই ধরনের কর্তব্য রয়েছে। প্রথমত স্রষ্টার প্রতি কর্তব্য, তারপর সৃষ্টির প্রতি কর্তব্য। সৃষ্টির প্রতি মানুষের কর্তব্যগুলোর মধ্যে অসহায় ও দুস্থ মানুষকে সাহায্য ও সহযোগিতা করা যেমন কর্তব্য, তেমনি গাছপালা, পশু-পাখি, বৃক্ষলতা এবং পরিবেশের প্রতিও মানুষের কর্তব্য রয়েছে। সৃষ্টির প্রতি সদয় হলে এবং এদের লালনপালন ও রক্ষণাবেক্ষণ করলে আল্লাহ খুশি হন। তেমনি এদের প্রতি অবহেলা করলে, নিষ্ঠুর আচরণ করলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।

আমাদের চার পাশের কীটপতঙ্গ, গাছপালা, তরুলতা, পশু-পাখি সবকিছুর প্রতি মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। কারণ এ সবকিছু নিয়েই আমাদের পরিবেশ। আমাদের স্বার্থেই এ পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। মহান আল্লাহ এ সবকিছু আমাদের উপকারের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আমাদের প্রিয় নবি (স.) সৃষ্টিজীবের প্রতি সর্বদা সদয় ছিলেন। সমাজে কোনো ব্যক্তি পীড়িত হলে তার সেবা করতে হবে। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। এভাবে সমাজে একে অপরের সেবা ও সাহায্য করলে আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়া যায়। প্রিয় নবি (স.) বলেছেন, 'যে মুসলমান অন্য মুসলমান ভাইয়ের অভাব মোচন করে আল্লাহ তায়ালা তার অভাব দূর করেন।' (মুসলিম) গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, কুকুর, বিড়াল প্রভৃতি সকল প্রাণীরই আমাদের ন্যায় ক্ষুধা ও পিপাসা আছে। এদেরকে খেতে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।

মহানবি (স.) বলেন, 'কোনো এক মহিলা একটি বিড়াল বেঁধে রাখে। সে বিড়ালটিকে খেতে দেয়নি এবং ছেড়েও দেয়নি যাতে পোকামাকড় খেয়ে জীবনধারণ করতে পারে। অবশেষে বিড়ালটি বাঁধা অবস্থায় খাদ্যাভাবে মারা গেলে আল্লাহ ঐ মহিলাকে শাস্তি দেন। (বুখারি ও মুসলিম)

প্রিয় নবি (স.) আরও বলেন, 'বনি ইসরাইলের এক পাপী মহিলা একটি তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পিপাসায় কাতর দেখে পানি পান করায়। এতে আল্লাহ তায়ালা ঐ মহিলার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাকে ক্ষমা করে দেন।' (বুখারি ও মুসলিম)

জীবজন্তুর মতো উদ্ভিদের প্রতিও সদয় হতে হবে। অকারণে গাছ কাটা উচিত নয়। গাছের পাতা ছেঁড়া বা চারাগাছ উপড়ে ফেলাও উচিত নয়। গাছপালার যত্ন করা উচিত। বৃক্ষলতাও মহান আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করে। পরিবেশ রক্ষায় ও নিজেদের প্রয়োজনে জীবজগৎ ও পরিবেশের প্রতি সদাচরণ করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

আমরা সৃষ্টির সেবা করব, জীবজন্তুকে কষ্ট দেবো না। অকারণে কোনো বৃক্ষের ক্ষতি করব না। বৃক্ষ রোপণ করব এবং এর যত্ন করব।

দলগত কাজ: শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে সৃষ্টির সেবামূলক কাজগুলোর একটি তালিকা তৈরি করবে।
Content added By
Promotion